Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র

পুষ্টি জরীপে দেখা যায় যে, আমরা আমাদের দৈনন্দিন খাবারে যে পরিমাণ প্রাণীজ আমিষ গ্রহণ করে থাকি তার শতকরা ৮০ ভাগই যোগান দেয় মাছ। দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার দেশেসমূহের মধ্যে বাংলাদেশে প্রাকুতিক মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধশালী মৎস্য সম্পদের উৎস হচ্ছে দুটি: আভ্যমত্মরীণ জলাশয় ও সামুদ্রিক জলাশয়। আভ্যমত্মরীণ জলাশয় দুভাগে বিভক্ত যথা: আভ্যমত্মরীণ বন্ধ জলাশয় এবং আভ্যমত্মরীণ মুক্ত জলাশয়। আভ্যমত্মরীণ বন্ধ জলাশয় হচ্ছে পুকুর, দিঘি, বাওড়, ও উপকূলীয় টিংড়ী খামার । আভ্যমত্মরীণ মুক্ত জলাশয় হচ্ছে নদ-নদী, কাপ্তই হ্রদ এবং প্লাবন ভুমি।

 

মৎস্য সম্পদ হ্রাসের কারণ

- মৎস্য সম্পদের উপর আমাদের অবহেলা

- পলি পড়ে ভরাট হওয়ার জলাশয়ের আয়তন সংকোচন

- অপরিকল্পিত  বাঁধ নির্মাণ ও পানি সেচ

- নির্বিচারে  পোনা বিনষ্ট করা ও ডিমওয়ালা মাছ ধরা

- শীত মৌসুমে বহু বিল ও নিচু অঞ্চল শুকিয়ে যাওয়া

- মৎস্য ক্ষেত্র কৃষি ক্ষেত্রে রূপান্তর

- মৎস্য প্রজনন ও চলাচলের স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্টকরণ

- কৃষি জমিতে নির্বিচারে কীটনাশক প্রয়োগ

- শিল্প বর্জ্য নদীতে নিক্ষেপের ফলে পানি দূষণ

- অবৈধ জল ব্যবহার করে ছোট মাছ নিধন

- মুক্ত জলাশয়ে মাছের জৈবিক পরিচর্যার অভাব

- পুবুরে মাছ চাষ অনীহা

- চাষোপাযোগী জলাকে অনাবাদী অবস্থায় ফেলে রাখা ইত্যাদি।

          ঘানা, চীনা, জার্মান, রাশিয়া, আমেরিকা, ইসরাইল, থাইল্যান্ড, পিলিপাইন  ইত্যাদি দেশে বৈঞ্জানিক পদ্ধতিতে মাছের চাষ করে বছরে একর প্রতি ফলন ৪.৫-৬.০ মেট্রিকটনে উন্নতি করা সম্ভব হয়েছে।  এমন কি আমাদের প্রতিবেশী ভারতবর্ষেও বিভিন্ন দেশে বিদেশে ভাল জাতের মাছ এবং জৈব ও অজৈব সার ব্যবহার  করার ফলে বছরে মাছের একর প্রতি ফলন দাড়িয়েছে  প্রায়  ৩.৭৫ মেট্রিকটন। আমাদের দেশে মাছ চাষের পরেবেশ এত সুন্দর চোষোপযোগী জলাতে বৈঞ্জানিক  দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মাছের চাষ করলে আমরাও  অনায়াসে বছরে  একর প্রতি কমপক্ষে ৯৩৩ কেজি থেকে ১১২০ কেজি মণ মাছ ফলাতে পারি ।

          দেশে মৎস্য চাষ সম্প্রাসারণের সুফল শুকু আমাদের খাদ্র প্রয়োজন মেটাবার মধ্যে সীমিত নয়। এ মৎস্য চাষের ব্যাপকত্বের পলে দেশের  অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ও সুনিশ্চিত নিশ্চয়তা রয়েছে। মৎস্য সম্প্রসারণের  পরে একদিকে যেমন আমাদের খাদ্যে প্রাণীজ আমিষের প্রাচুর্য ঘটবে, তেমনি বহু সংখ্যক উদ্বৃও মাছ বিদেশে রফতানী করেও অর্জিত হবে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা ।

 

মৎস্য সংরক্ষণ আইন

       ১৯৫০ সালে ‘‘মৎস্য সংরক্ষণ আইন’’ প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তীতে অধিকত যুগোপযোগী করার জন্য ১৯৮২,১৯৮৫,১৯৮৭,১৯৮৮,এবং ১৯৯৫ সালে এ আইণের কতিপয় ধারা সয়শোধ সংযোজন এবং পরির্মাজন করা হয়। এ আইনের প্রধান প্রধান বিষয়সমূহ সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো:-

-    নদী- নালার মাছের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত করা যাবে না।

-    বিস্ফোরক, বন্দুক ও ধনুক ব্যবহার করে  মাছ শিকার বা আহরণ নিষিদ্ধ।

-   পানিতে বিষ প্রয়োগ, কলকারখানার  বর্জ্য নিক্ষেপ বা অন্য কোন উপায় পানি দুষন মাছের আবাসস্থলবা প্রজনন ক্সেত্র ধ্বংস করা নিষিদ্ধ।

-  চাষেনর উদ্দেশ্য ব্যতীত আষাঢ়ের মাঝামাঝি হতে পৌষের মাঝামাঝি    পযন্ত ২৩ সে:মি-এর চাইতে ছোট রুই, কাতল, মৃগেল, কালবাউস  এবং ঘনিয়া মাছ ধরা নিষিদ্ধ।

-   প্রজনন মৌসুমে যে কোন আকারের রুই, কাতল, মৃগেল, কালবাউস, ও ঘনিয়া মাছ ধরা নিষিদ্ধ।

-   চৈত্রের মাঝামাঝি হতে জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝি পযন্ত মুক্ত জলাশয়ে শোল, গজার ও টাকি মাছের পোনা ধরা নিষিদ্ধ।

-   কারেন্ট জালের  ব্যবহার নিষিদ্ধ।

           উপরোক্ত আইন অমান্যকারীর কারাদন্ড ও জরিমানা হতে পারে।

      ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বাবলী

·             মাছ চাষে জনগণকে উদ্ধুদ্ধ করা;

·             মাছ চাষ উপযোগী পুকুর খনন, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যায় জন গণকে সহায়তা করা;

·             মাছের পোনা সংগ্রহে জনগণকে সহায়তা করা;

·             আধুনিক পদ্ধতিতে চাষের জন্য আগ্রহী ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণের জন্য উপজেলা মৎস্য কমকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা;

·             মাছের রোগ প্রতিকারের জন্য উপজেলা মৎস্য কমকর্তার সাথে যোগাযোগ করে  প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে জনগণকে পরামশ প্রধান করা;

·             ইউনিয়ন  পরিসদের নিজস্ব পুকুর, খাল ইত্যাদিতে মাছ চাষের পুরকল্পনা গ্রহন করা।

 

মাছ চাষের পুকুর :

আধুনিক উপায়ে মাছ চাষের জন্য পুকুরকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে যথা: ১. আতুড় পুকুর বা রেণু মাছের পুকুর ২. চারার পুকুর বা নলা মাছের পুকুর ও ৩. মজদু পুকুর বা মাছের পুকুর ।

পুকুর রক্ষণাবেক্ষ ও পরিচর্যা

       পুকুরে মাছ ছাড়ার আগে পুকুর থেকে রাক্ষুসে মাছ যেমন: বোয়াল, শোল, চিতল, আইর ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হয়। পুকুর থেকে যদি রাক্ষুসে মাছ সম্পূণর্রূপে সরি য়ে ফেলা স্ভব না হয় তাহলে এমন আকরে র বড় পোনা পুকুরে মজুদ করতে হবে যাতে রাক্ষুসে মাছ এদের খেয়ে ফেলতে না পারে।

       মাছ ছাড়ার আগে পুকুরের পানির গুনাগুণ যেমন-পি,এইচ,মা্ন (অম্লতা ও ক্ষারতা), টারবিডিটি (ঘোলাটত্ব)ইত্যাদি দেখে নেয়া দরকার। এসব গুনাগুণ পরীক্ষা করার জন্য স্থানীয় উপজেলা ও জেলা মৎস্য উন্নয়ন  কমকর্তাগণ সহায়তা দান করবেন।

       মাছ চাষের পুকুরে বেশী আগাছা জন্মালে মাছের খাদ্য ঘাটতি দেয়, অক্সিজেনের অভাব হয়, মাছের চলাফেরায় ব্যাঘাত ঘটায়। এজন্য পুকুরকে সব সময় আগাছা মুক্ত রাখা দরকার।

       পুকুর পাড়ে ঝোপ-ঝাড় বিশিষ্ট গাছপালা থাকা উচিৎ নয়। তাতে পুকুরে আলো-বাতাস লাগে না এবং গাছের পাতা পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। পানি দষিত হওয়ার ফলে অনেক ক্ষেত্রে মূল্যবান পোষা মাছও মারা যায়।

       মাছ ছাড়ার আগে ও পরে সব সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে পুকুরের পানিতে কীটনামক ঔষধ যেমন-এনড্রিন , বসসডিন ইত্যাদি না পড়ে বা কীটনাশক ঔষধ ব্যবহারের যন্ত্রপাতি পুকুরের পানিতে ধোয়া না হয়। এসব কীটনাশক ঔষধ মা্ছের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক।

       মাছ ছাড়ার পর মাছ যদি পানির উপরে এস খাবি খেতে থাকে, তাহলে  বুঝতে হবে যে পানিতে দৃবিভূত অক্সিজেনের অভাব রয়েছে এমতাবস্থায় পানিতে বাঁশ পিটিয়ে বা সাঁতার কেটে পানি ঘেটে দিতে হবে। এতে বায়বীয় অক্সিজেন পানিতে দ্রবিভূত হয়ে মাছের শ্বাসকষ্টের  উপশম হয়। মাছ সুস্থ থাকে।

পোনা মাছ সংগ্রহ

       আমাদের দেশে প্রধানত: রুই, কাতলা, মৃগেল,কালবাউশ ও ঘনিয়া ইত্যাদি মাছের চাষ করা হয়। কিন্তু এসব মাছ দীঘি কিংবা পুকুরে ডিম ছাড়ে না।বৈশাখ জ্যৈষ্ঠও আষাঢ় মাসে অমাবস্যা-পূর্ণিমার সময় বিশেষ আবহাওয়া ও পরিবেশে বিভিন্ন নদ-নদীতে এসব মাছ ডিম ছেড়ে থাকে। আমাদের দেশের নদীর  যে সব স্থানে এসব মাছের ডিম  ও রেণু পাওয়া যায় তাহলো:

       ক. চট্রগ্রামে হালদা নদী।

খ. ফুলছরি ঘাট, বাহদুরাবাদ ঘাট, তরাই ও আরিচা ঘাট এবং     সিরাজগঞ্জ ঘাটের  নিকটস্থ যমুনা নদী।

 গ. রাজশাহী জেলা ও চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার কাছে পদ্মা নদী।

 ঘ. কুষ্টিয়া শহরের পার্শ্ববর্তী গড়াই নদী।

 ঙ. ফরিদপুরের কবিরাজপুরের নিবকস্থ আড়িয়াল খাঁ নদী।

চ. ময়মনসিংহ শহরের পার্শ্ববর্তী আদি ব্রক্ষপুত্র ।

ছ. বগুড়ার সোনাতলা।

       উল্লেখিত এলাকায় কেবলমাত্র হালদা নদীতেই মাছের নিষিক্ত ডিম ধরা হয়। ডিম ধরার পর স্থানীয় বাসিন্দাগণ তা নিজেদের পুকুরে ফুটিয়ে বিক্রীর জন্য মজুত রাখে । দেশের অন্যান্য এলাকায় নদী থেকে সরাসরি রেণু বা ধানি পোনা ধরে বিক্রীর ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।

       এসব প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র্র ছাড়াও পোনা উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশের সরকারের মৎস্য বিভাগ দ্বারা পরিচালিত কিছু সংখ্যক কৃত্রিম মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র চালু রয়েছে।এসব কেন্দ্রে রুই জাতীয় মাছকে ঐ হরমোন ইনজেকশনের দ্বারা বন্ধ জলাশয়ে ডিম ছাড়ার জন্য উদ্ধুদ্ধ করা হয়। সারাদেশে কৃত্রিম প্রজননের  সে সব ইউনিট চালু রয়েছে সে গুলো হলে:-

       ক. স্বাদুজন মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র চাঁদপুর ।

       খ. জাংগালীয়া মৎস্য বীজাগা, কুমিল্লা।

       গ. সংগ্রাইস কৃত্রিম প্রজনন ইউনিট, কুমি ল্লা।

       ঘ. শায়েস্তাগঞ্জ মৎস্য বীজগার , সিলেট।

       ঙ. মীরেরসরাই মৎস্য বীজগার, চট্রগ্রাম।

       চ. পটিয়া মৎস্য বীজগার, চট্রগ্রাম।

       ছ. নটোর মৎস্য বীজগার, নাটোর ।