Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব

প্রখ্যাত ব্যত্তিদের তালিকায় যার নাম সর্বাগ্রে আসে

মরহুম জনাব আব্দুস সামাদ আজাদ (সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী),গ্রাম+ডাক:-ভুরাখালী, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ।

ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জ জগন্নাথপুর উপজেলা সদর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূর উপজেলার টিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের শেষ সীমামত্ম নলুয়ার হাওর পাড়ের একটি গ্রাম ভূরাখালি। যাতায়াতের সুবিধা বলতে বর্ষা মৌসুমে হাওরের ঢেউ ডিঙ্গিয়ে নৌকা আর হেমমেত্ম হাওরের পীচ ঢালা সরম্ন পথ পেরিয়ে হিজল করচ বেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত অপরূপ দৃশ্য অবলোকন করে অটোরিকশা কিংবা সিএনজি যোগে যেতে পারেন সেই গ্রামে। যে গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেছেন মুজিব নগর সরকারের প্রথম প্রররাষ্ট্রমন্ত্রী আমর্ত্মজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কুটনীতিবীদ আব্দুস সামাদ আজাদ। ১৯২২ সালের ১৫ জানুয়ারী তাঁর জন্ম। আধুনিক বাংলাদেশে ডিজিটাল স্বপ্নের যুগেও এসেও যে গ্রামটি অবহেলিত গ্রামের তালিকায়। ১৯২২ সালে এ গ্রামের অবস্থান কি ছিল তা বর্ণনার অপেক্ষায় রাখে না। জগন্নাথপুর ও দিরাই উপজেলার শেষ সীমান্ত ভাটির দ্বীপ ভূরাখালি গ্রামে সেই সময় ছিলনা কোন বিদ্যাপীট। লেখাপড়ার প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ থাকার কারণে পারিবারিকভাবেই স্বরবর্ণের হাতেকাড়ি নেন। এরপর ১৫ কিলোমিটার দূর পাশ্ববর্তী দিরাই উপজেলার একটি বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। পরে জগন্নাথপুর উপজেলার সর্ব প্রথম প্রতিষ্ঠিত পাইলগাঁও ব্রজেন্দ্র নারায়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরে উপজেলা সদরের স্বরূপ চন্দ্র সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে কিছুদিন অধ্যায়ন করে সুনামগঞ্জ জুবলি স্কুল থেকে মেট্রিক পাস করেন। ১৯৪৮ সালে সিলেট এম.সি কলেজ থেকে স্মাতক ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পেশা ভর্তি হয়ে কৃতিত্বের সহিত প্রথম র্পাট সম্পন্ন করলেও রাজনৈতিক কারণে ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। বরেণ্য এ রাজনীতিবীদের রাজনৈতিক দায়বোধের স্পষ্ট পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর স্কুল ও কলেজ জীবনের কর্মকান্ডে। ১৯৪০ সালে সুনামগঞ্জ মুসলিম ছাত্র ফেডারেশন সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। একজন রাজনীতিবীদ হিসেবে জগন্নাথপুর, দিরাই, নবীগঞ্জ, বানিয়াচং নিয়ে গঠিত বালস্না অঞ্চলের সুরমা ভ্যালী কিষাণ কনফারেন্স প্রখ্যাত রাজনীতবীদ জ্যোতি বসু, করূনা সিন্ধু রায়, পীর হবিবুর রহমানের সাথে দিয়ে এলাকার অধিকার আদায়ের সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নৌকা প্রতীক নিয়ে এম এল এ নির্বাচিত হন। এবং ওই সময় আওয়ামীলীগ যোগ দিয়ে কেন্দ্রীয় শ্রম সম্পাদক নিযুক্ত হন। এসময় কেন্দ্রীয় সরকার তাঁর বিরম্নদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করে সমসত্ম সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করায় গ্রেফতারী পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়ান। ১৯৫৮ সালের ২৮ জুন পাবনার শাহাজাদপুর উপজেলার খাসাতবাড়ীয়া গ্রামের কাজীম উদ্দিন সরকারের মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহিলা হল বর্তমান রোকেয়া হলের প্রথম নির্বাচিত মহিলা ভিপি নূরম্নন নাহার বেগমকে বিয়ে করেন। ওই বছরের ২৭অক্টেবর আইয়ূব খানের সামরিক আইন জারীর পর আওয়ামীলীগ নিষদ্ধ ঘোষনা করা হলে ফের গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী হয় এবং গ্রেফতার হন। ১৯৬২ সালে তিনি জেল থেকে মুক্তি পান । ১৯৬৪ সালে তারঁ জীবনে আবারও কারাবন্দিত্বের পূনরাবৃত্তি ঘটে। মুক্ত হয়েই রাজনৈতিক সংগ্রামে সক্রিয় হন। ছয়দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ গণঅভ্যূথ্যান ১৯৭০ সালে আওয়ামীরীগের প্রার্থী হিসেবে সুনামগঞ্জ জেলার দুটি আসন থেকে নিবার্চন করে জাতীয় পরিষদ সদস্য নিবার্চিত হন।এরপর ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষ বিশ্ব জনমত গটনে ছুটে বেড়ান। যা বাঙ্গালীর জবিনে চিরকাল স্বরণযোগ্য। স্বাধীন বাংলার প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদের জন্মভিটের খুঁজে নলুয়ার হাওয়র পাড়ি দিয়ে মেঠো পলস্নীর আকাঁ বাকাঁ পথ পেরিয়ে দুইপ্রামেত্মর সোনালী ফসলের ঢেউয়ের দোল দেখতে দেখতে উপজেলার শেষ সীমামেত্মর গ্রাম ভুরাখালীতে প্রবেশ করি। পাকা রাস্তা পেরিয়ে পায়ে হেঁটে কিছু দুর গিয়েই দেখা মিলে ভুরাখালি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্তমানে আব্দুস সামাদ আজাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। যার সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র। বর্ষা মৌসুমে গ্রামের মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ের কথা চিমত্মা করেই এ আশ্রয়কেন্দ্রটি নির্মাণ করেছিলেন সুখ দুঃখের আপনজন আব্দুস সামাদ আজাদ। আশ্রয় কেন্দ্রের পিছনের বাড়ীটি আব্দূস সামাদ আজাদের ঐতিহাসিক জন্মভূমি। হিজল করচ বেষ্টিত নলুয়ার হাওয়র পাড়ের ওই বাড়ীতে ঢুকলেই একটি আধা পাকা টিনসেট ঘর। অসংখ্য বৃক্ষলতা শোভিত বাড়ীতে চোট একতলা বিল্ডেং থাকলেও পরনো আমলের টিন সেট ঘরটি যেন এ এলাকার উজ্জলতার প্রতীক। কী আছে স্বাধীন বাংলার প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদের বিজড়িত এই বাসভবনে, কৌতুহল মেটাতে দেখতে চাইলে আব্দুস সামাদ আজাদের ভাতিজা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাফিজ উন্মোচন করলেন বন্ধ দরজা। চৌকাঠ ডিঙ্গাঁতেই চোখে পড়ে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টাঙ্গাঁনো। রয়েছে জাতীর জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। যৌবনের তেজদীপ্ত আব্দুস সামাদ আজাদের নিজের একটি ছবি। রয়েছে বড় একটি কাঠের চেয়ার টেবিল বেঞ্চের মতো একবারে আটপোরে কিছু জিনিষ। এছাড়া উলেস্নখ করা মত এই বাড়ীতে কিছু নেই। নেই জৌলুসতার কোন চিহৃ। কেউ বিশ্বাস করতে পারবেনা এটি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ী। অথচ উপজেলা সদর থেকে ভূরাখালি পর্যমত্ম পৌঁছতে চোখে পড়ে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত অসংখ্য সুরম্য অট্রালিকা। গ্রামে বসবাসরত কার আত্নীয় স্বজনদের সাথে আলাপ করে জানা যায় যে, ২০০৫ সালে মৃত্যু শয্যা থাকাবস্থায় রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের ব্যয়বার বহনের জন্য তার উত্তরসরীদেরকে রাজধানীর কলাবাগানে থাকা একমাত্র বাসাটি ফ্ল্যাট বাড়ী বানিয়ে বিক্রি করতে হয়েছে। অথচ জনশ্রম্নতি রয়েছে সিলেট সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্নস্থানে আব্দুস সামাদ আজাদের নাম ব্যবহার করে অনেকেই বিত্ত বৈভবের মালিকে হয়েছেন। আব্দুস সামাদ আজাদ মুজিবনগর সরকারের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার রাজনীতি শুরু করেন। পরে আওয়ামীলীগ সরকারের কৃষি মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে জাতীয় চার নেতার সাথে তিনিও গ্রেফতার হন। ভাগ্যের শুনে সে দিন বেচেঁ গেলেও অত্যাচার নির্যাতন জেল জুলুম তাঁর সঙ্গী হয়ে পড়ে। শত নির্যাতনের পরও নীতি আর্দশের সংগ্রামে অবিচল থেকে চালিয়ে যান রাজনৈতিক দর্শন। পরবর্তীতে তাঁর  প্রিয় সংগঠন আওয়ামীলীগকে বিধ্বসত্ম অবস্থান থেকে পূনর্গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে এনে আওয়ামীলীগের দায়িত্ব তুলে দিতে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছিলেন। পূণর্গঠিত আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে জগন্নাথপুর-দক্ষিন সুনামগঞ্জ আসন থেকে আওয়ামীরীগের প্রার্থী হিসেবে ১৯৯১,১৯৯৬,ও ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নিবার্চিত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করলে তিনি আবারও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। আমর্ত্মজাতিক কুটনীতিবিদ হিসেবে দেশে বিদেশে সুনাম অর্জন করলেও নিজের কিংবা তাঁর আত্নীয় স্বজনদের ভাগ্যে উন্নয়নে কিছু করেননি। ক্ষমতায়নের প্রভাব থেকে আত্নীয় স্বজনকে মুক্ত রাখেন। তাঁর গ্রামের বাড়ীটি না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে পারবেনা। এলাকার উন্নয়নে তাঁর আমত্মরিকতার প্রমান পাওয়া যায় জীবনের শেষ সায়াহ্নে এসে এলাকার উন্নয়ন কাজ তদারকি করতে। তার জ্যেষ্ট পুত্র আজিজুস সামাদ ডনের কথায়। তিনি বলেন আমার বাবা মৃত্যু শয্যায় থেকেও এলাকার উন্নয়নের কথা ভাবছেন। জোট সরকারের শাসনামলে তাঁর শুরম্ন করা কাজ গুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করে হাসপাতালে দেখতে যাওয়া তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিকট তিনি কাজগুলো চালুর দাবী জানান। কাজগুলো হলো পাগলা-জগন্নাথপুর  আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়ক ও আধুনিক অডিটরিয়াম নির্মাণ কাজ। যা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।            

 

এছাড়াও যাদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ্য -

২। জনাব চান মিয়া, গ্রাম+ডাক:-চিলাউড়া, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ।

৩। জনাব আলহাজ হাবিবুর রহমান (সাবেক চেয়ারম্যান),গ্রাম+ডাক:-চিলাউড়া, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ।

৪। মরহুব আছাব আলী (সাবেক চেয়ারম্যান),রাম+ডাক:-বাউধরন, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ।